বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ক্রিকেটকে আরো ছড়িয়ে দিতেই ক্রিকেট দর্পণ এর পথ চলা শুরু হয় ২০১০ এর জুনে। আর সেই থেকে আজ ২০২৫ এর ২৩এ জুলাই তে এসেও ক্রিকেট দর্পণ আজো তাদের সেই লক্ষ্যে অবিচল।
বিগত ১৫ পাড় করে ১৬-য় পা দিয়েও সে এক-ই ভাবে এই বাংলার ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের নিয়ে জেলা থেকে জেলান্তরে কাজ করে চ'লেছে, চ'লছে- চ'লবে। আর এটা কোনো দাবী বা কারো কোনো স্বীকারোক্তি নয়, বরং এটাই সত্য। আমাদের এই কথার মধ্যে এতটুকু ভনিতা বা কোনো বাগাম্বড়িতা নেই। আছে- বিশ্বাস, আছে পরিকল্পনা, আর আছে ধৈর্য।
ঢাল তলোয়ার হীন একটি পরিবার কেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান হ'য়েও শুধুমাত্র পরিকল্পনা, ইতিবাচক সদ্ভাবনা ও অদম্য প্রচেষ্টাকে সম্বল করে সম্পূর্ণ স্বকীয়তা আর নিজস্বতা দিয়ে কাজ করে চ'লেছে ক্রিকেট দর্পণ। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে, সেই চলায় গতির মন্থরতা অবশ্যই আছে, কিন্তু তাই ব'লে বিগত ১৫ বছরে তাদের সেই চলার গতিতে কখনো স্থবিরতা নেমে আসেনি। বরং সেই চলার একটা পথ নির্দেশ ছিল, আছে আর থাকবেও- আর সেটাও সামনের দিকে। ধীরে হ'লেও সেই চলনে এক নিরবচ্ছিন্ন ধারাবাহিকতাও বজায় রাখা গেছে। আর এর পরেও যে কোনো ব্যর্থতা আসেনি, তা যেমন বলবোনা, ঠিক তেমনি ব্যর্থতার দায় অন্য কাউকে দিতে চাইবোনা, কিংবা সে জন্য কোনো অজুহাত দেবোনা।
আজ থেকে ১৫ বছর আগে ক্রিকেট দর্পণ নামাঙ্কিত একটি থ্রী ফোল্ড পত্রিকা প্রকাশের মধ্যে দিয়ে যারা বাংলার ক্রিকেট অঙ্গনে পারিবারিক প্রতিষ্ঠান রূপে চলা শুরু করে ২০১০ এর ১৩-ই জুনে। যে প্রতিষ্ঠানের প্রধান কাজ-ই হ'ল ক্রিকেট অঙ্গনে ঘটে চলা বয়েস ভাঁড়ানো ও নাম ভাঁড়িয়ে ক্রিকেটার খেলানো থেকে একাধিক দূর্নীতির প্রতিরোধে প্রতিবাদী কলম ধরা ও সেটাই পত্রিকায় প্রকাশ করা।
কিন্তু এখানেই থেমে থাকা যায়নি বরং এরসঙ্গে ক্রিকেট অঙ্গনে ঘটে চলা সেই সব অনৈতিক কাজের বাইরে গিয়েও যে সদিচ্ছা নিয়ে টুর্ণামেন্ট আয়োজন করা যায়, আর সেটা প্রমাণ করতেই ও ক্রিকেট দূর্নীতির প্রতিরোধে হাতে কলমে লেগে পড়া হয়, ক্রিকেট দর্পণ সূচনার মাত্র এক বছরের মধ্যে। আর সেই ২০১১-১২ থেকে ক্রিকেট দর্পণ টুর্নামেন্ট আয়োজক রূপে পথ চলা শুরু করে।
প্রথম বছরে (২০১১-১২ মরশুমে) মাত্র ১টি টুর্ণামেন্ট আয়োজন করার মধ্যে দিয়ে যার শুরু। আর প্রথম বছরের টুর্ণামেন্ট আয়োজনের পরেই তারা অর্থাৎ ক্রিকেট দর্পণ বুঝতে পেরেছিলো ক্রিকেট দর্পণ যদি ভবিষ্যতে তাদের টুর্ণামেন্টকে ধারাবাহিক ভাবে ও একটি নির্দিষ্ট মান বজায় রেখে করতে চায়, তবে অবশ্যই তাদের নিজস্ব আম্পায়ার ব্যাঙ্ক গড়ে তোলা প্রয়োজন।নিজস্ব ও প্রশিক্ষিত আম্পায়ার ছাড়া নিয়মিত ভাবে যথাযথ মান বজায় রেখে টুর্ণামেন্ট আয়োজন করা কখনোই সম্ভব নয়।
আর তাই, যেমন ভাবা তেমন কাজ। ২০১২ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত (মাঝে এক বছর করোনা তথা কোভিড-১৯ এর কারনে বন্ধ থাকলেও) বিগত ১৩ বছরে ক্রিকেট দর্পণ প্রতি বছর ধারাবাহিক ভাবে আম্পায়ার ট্রেনি কোর্স করে আসছে। এটি একটি সম্পূর্ণ ফ্রি কোর্স। এই মুহূর্তে দুই ২৪ পরগণা, দুই মেদিনীপুর সহ নদিয়া, কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, বর্ধমান, বাঁকুড়া মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, সহ বিভিন্ন জেলাগুলি থেকে এসে ক্রিকেট দর্পণ আয়োজিত দুমাস ব্যাপী এই আম্পায়ার ট্রেনিং কোর্সে প্রতি বছর একাধিক ছেলে ও মেয়েরা ক্লাস করে গেছে। এখানকার আম্পায়ার এডুকেটর হিসেবে যেমন উদয় হালদার ও স্বপণ কুমার ঘোষ রয়েছেন তেমনি ক্রিকেট দর্পণ আয়োজিত এই ফ্রি আম্পায়ার ট্রেনিং কোর্সের প্রধান আম্পায়ার এডুকেটর হিসেবে তারা পেয়েছে প্রাক্তণ আন্তর্জাতিক আম্পায়ার তথা প্রাক্তণ বিসিসিআই আম্পায়ার তথা আম্পায়ার এডুকেটর ফ্রান্সিস গোমসকেও।
প্রসঙ্গত আরো বলার এটাই বিভিন্ন জেলা থেকে আসা সেই সব ছেলে-মেয়েদের মধ্যে ইতিমধ্যেই অন্তত পঞ্চাশ (৫০) জনের বেশি পাশ করা আম্পায়ার যেমন আছেন, তেমনি ক্রিকেট দর্পণ এর এই আম্পায়ার ট্রেনিং কোর্স পাশ করা আম্পায়ারদের মধ্যে এযাবৎ হওয়া ৩ বারের সিএবি আম্পায়ার পরিক্ষায় যে ১৪ জন পরীক্ষা দেয়, তাদের প্রত্যেকে সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় এবং ক্রিকেট দর্পণ আম্পায়ারের পাশাপাশি তারা সিএবি আম্পায়ার রূপেও স্বীকৃতি পেয়েছে।
অন্যদিকে ২০১১-১২ মরশুমে যে ক্রিকেট দর্পণ মাত্র ১টি টুর্ণামেন্ট (সাব-জুনিয়ার অনূর্ধ্ব-১৪) দিয়ে টুর্ণামেন্ট আয়োজক হিসেবে পরিচিতি পায়, ২০২৫ এ এসে সেই ক্রিকেট দর্পণ ৮টি টুর্ণামেন্ট আয়োজন করছে। যারা প্রথম বছরে ৬৭ টি ম্যাচ আর পুরো মরশুমে ৬৭ দিন এর মধ্যেই তাদের মরশুম সিমিত রেখেছিলো, সেই ক্রিকেট দর্পণ ২০২২৪-২৫ মরশুমে সর্বোমোট ৩০০-র কাছাকাছি ম্যাচ, যা সাকুল্যে কমবেশি ২৪০ থেকে ২৬০দিনের মরশুমে এসে নির্ধারিত হ'য়েছে। বর্তমানে নার্সারী (অনূর্ধ্ব ১২) টি টুয়েন্টি টুর্নামেন্ট, সাব-জুনিয়ার (অনূর্ধ্ব ১৫),অনূর্ধ্ব ১৯ জুনিয়ার ওয়াডে টুর্ণামেন্ট ছাড়াও ক্রিকেট দর্পণ ওয়ানডে টু ইনিংস এবং টুডেজ টু ইনিংস টুর্ণামেন্ট, করে থাকে। এর সঙ্গেই প্রমীলাদের জন্য ১৬, ১৯ ও সিনিয়ার টি টুয়েন্টি টুর্নামেন্ট করানো হয়। পাশাপাশি স্কুল টুর্ণামেন্ট আয়োজন নিয়ে ধারাবাহিক হ'তে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কোভিড পরবর্তীতে স্কুল টুর্ণামেন্ট কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর ২৫-২৬ এর এই মরশুমে পুনরায় করার কথা ভাবা হচ্ছে।
পাশাপাশি ক্রিকেট দর্পণ এর অন্যতম আরো একটি কর্মকাণ্ড হ'ল বাৎসরিক পুরষ্কার বিতরণ ও গুণীজনদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। বাস্তবিকই ক্রিকেট দর্পণ এর কাছে এই দিনটি এক মিলনোৎসবের নামান্তর। আর ২০১১ থেকে ২০২৫ এর মধ্যবর্তী সময়ে মাত্র এক বছর ২০২০ সালে কোভিড-১৯ এর কারন এই অনুষ্ঠান করা না গেলেও ২০২০-২১ এ ঐ দুই মরশুমের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান একসাথে ২০২১ করা হয়।
প্রসঙ্গত জানানো যায় ক্রিকেট দর্পণ পুরষ্কার বিতরণ মঞ্চ থেকে প্রতিবছর গুনীজন সম্মাননা জ্ঞাপণ প্রেক্ষিতে যে স্মারক মানপত্র দেওয়া হয় তার মধ্যে অন্যতম একটি "ক্রিকেট দর্পণ মরণোত্তর ক্রীড়ারত্ন সম্মাণ "...যা এখনো পর্যন্ত প্রতি দুবছর অন্তর করে একাধিক ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব- গনের বাড়ির মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এই মাণপত্র যাঁরা পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে প্রাক্তণ ক্রিকেটার হিসেবে আছেন- প্রয়াত শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় (সুঁটে ব্যানার্জী), পঙ্কজ রায়, পি. সেন, গোপাল বসু ছাড়াও প্রশাসক হিসেবে যাঁরা আছেন, তাঁরা হ'লেন জগমোহন ডালমিয়া, আশুতোষ কর, বিশ্বনাথ দত্ত- এবং জয়ন্ত চ্যাটার্জী-দের (কাচ্চু-বাবু) মতো ক্রীড়া ব্যক্তিত্বগণও। এর পাশাপাশি মরণোত্তর ক্রীড়া রত্ন সম্মান স্বরূপ সম্মাননা জ্ঞাপণ করা হয়েছে প্রয়াত চন্ডীদাস গাঙ্গুলীকেও, যা সিএবি সভাপতি শ্রী স্নেহাশীষ গাঙ্গুলীর হাতে ক্রিকেট দর্পণ আয়োজিত ২০২২-২৩ এর বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে জগমোহন মঞ্চেই তুলে দেওয়া হয়েছে। আর ২০২৫ এর মরণোত্তর ক্রীড়া রত্ন সম্মান স্বরূপ মাণপত্র প্রদান করে সম্মাননা জ্ঞাপণ করা হ'ল সিএবির প্রাক্তণ সহঃ সভাপতি তথা দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার অন্যতম প্রধান প্রশাসক হিসেবে স্বীকৃত সকলের প্রিয় ও আদ্যোপান্ত মাঠের মানুষ রথীন সরকারকে।
সেই একই মঞ্চ থেকে আরো যে সকল বিশেষ স্মারক সম্মাণ দেওয়া হয় সেগুলির মধ্যে আরেকটি হ'ল-"ক্রিকেট দর্পণ জীবনকৃতি সম্মাণ"। ২০১৮ থেকে আজ পর্যন্ত যাঁরা এই সম্মাননা জ্ঞাপক মানপত্র পেয়েছেন তারা হ'লেন- প্রাক্তণ ভারতীয় ক্রিকেটার অরুণ জগদীশ লাল, ক্রীড়া প্রশাসক ও প্রাক্তণ ক্রীড়ামন্ত্রী কান্তি গাঙ্গুলী, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক আম্পায়ার ও বিসিসিআই আম্পায়ার এডুকেটর হিসেবে ফ্রান্সিস গোমস , এবং সফল ক্রিকেট প্রশিক্ষক হিসেবে জয়ন্ত ভৌমিক। এছাড়াও এই সম্মানে সম্মানিত করা হয়েছে বীরেন্দ্র নাথ মিত্র, সুবীর গাঙ্গুলীকে। আর ২০২৫ এ ক্রিকেট দর্পণ জীবনকৃতি সম্মান স্বরূপ সম্মাননা জ্ঞাপন করা হ'লো প্রাক্তন ফিফা রেফারি শ্রী প্রদীপ কুমার নাগ-কে।
প্রসঙ্গত জানানো যায়, ক্রিকেট দর্পণ এর পক্ষ্য থেকে তাদের বার্ষিক পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান মঞ্চকে ২০১৬ থেকে বাংলা তথা ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসনের সঙ্গে একই ভাবে উচ্চারিত ও ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্রিকেট প্রশাসক হিসেবে যিনি স্বীকৃত সেই প্রবাদ প্রতীম ক্রিকেট প্রশাসক "জগমোহন ডালমিয়া-কে স্মরণ করে তাঁর-ই নামাঙ্কিত মঞ্চ রূপে মেনে সেই পুরষ্কার বিতরণী মঞ্চের নাম দেওয়া হয় "জগমোহন ডালমিয়া মঞ্চ"। আজো যা ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চ'লেছে।
পাশাপাশি ২০১৮ থেকে এই একই মঞ্চ থেকে আরো একটি পুরষ্কার দেওয়া শুরু হয় তা হ'লো- বাংলার সেরা ক্রীড়া প্রশাসক এর পুরস্কার, যা প্রয়াত ক্রিকেট প্রশাসক জগমোহন ডালমিয়া-র নামাঙ্কিত- "জগমোহন ডালমিয়া দি বেস্ট স্পোর্টস অ্যাডমিনিস্ট্রেটর ইন বেঙ্গল" আর এই স্মারক সম্মাণটি এ যাবৎ যারা পেয়েছেন তাদের মধ্যে- বিশ্বরূপ দে, অনির্বাণ দত্ত, সুজন মুখার্জী, অভিষেক ডালমিয়া, পৃথ্বীজিৎ ঘোষ -এর মতো ক্রীড়া প্রশাসকগণও রয়েছেন। আর ২০২৫ এ এই সম্মান পাচ্ছেন কোচবিহার জেলার সচিব শ্রী সুব্রত দত্ত ।
অন্যদিকে ক্রিকেট দর্পণ ক্রীড়া রত্ন হিসেবে বাংলার কৃতি ক্রীড়া ব্যক্তিত্বদের সম্মানিত করতে আরো একটি স্মারক সম্মাণ এই অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকেই প্রতি বছর দেওয়া হয়। প্রতি বছর তিনজন ক্রীড়া ব্যক্তিত্বকে (বিভিন্ন বিভাগে) এই সম্মানে সম্মানিত করা হয়।
প্রসঙ্গক্রমে জানানো যায়, ক্রিকেট দর্পণ আয়োজিত এই মুহূর্তে যে নয়টি টুর্ণামেন্ট চালু রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম একটি টুর্ণামেন্ট হ'লো - "ওয়ানডে টু ইনিংস টুর্ণামেন্ট" যা ক্রিকেট দর্পণ এর সম্পূর্ণ নিজস্ব টুর্ণামেন্ট। আরো ভালো করে বললে বলা যায়, এই টুর্নামেন্টের সম্পূর্ণ ভাবনা ও পরিকল্পনা ক্রিকেট দর্পণ এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জয়দেব ভট্টাচার্য্য-র মস্তিষ্ক প্রসূত। ২০২০-র করোনা তথা কোভিড-১৯ এর সময়ে বাইশগজে বা মাঠের খেলা বন্ধ থাকলেও বাইশগজ নিয়ে ভাবনা বন্ধ থাকেনি। তারই প্রমাণ স্বরূপ যেন এটি, সেই সময়ে এই টুর্ণামেন্ট নিয়ে পরিকল্পনা করে ক্রিকেট দর্পণ, এবং যাকে পরবর্তীকালে যথাযথ ভাবে ও আইনী পরিভাষা অর্থাৎ টুর্ণামেন্ট বাই-ল'স এর আকারে নিয়মের বাঁধনে বাঁধেন ক্রিকেট দর্পণ আম্পায়ার উপদেষ্টা ও ক্রিকেট দর্পণ এর প্রধান আম্পায়ার এডুকেটর তথা প্রাক্তণ আন্তর্জাতিক আম্পায়ার ফ্রান্সিস গোমস। আর পরবর্তীতে এই টুর্নামেন্টের নিয়ম সংক্রান্ত বিষয়ে যা কিছু পরিমার্জন - পরিবর্তন এবং পরিবর্ধন করা হয়, সেটাও করেন সায়ন্তন ভট্টাচার্য্য এবং নির্বান কুমার বোস। ক্রিকেট দর্পণ এর দুই কৃতি আম্পায়ার। যারা সিএবি আম্পায়ারও বটে।
সাম্প্রতিক কালে বিশ্ব বরেণ্য এবং কিংবদন্তি ভারতীয় ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকার নিজে ওয়ানডে টুর্ণামেন্টকে আকর্ষণীয় করে তুলতে দু' ইনিংসে ভাগ করে করার কথা মিডিয়ায় ও জনসমক্ষে প্রস্তাব দিলেও, এটাই বাস্তব যে ক্রিকেট দর্পণ তার অনেক আগেই (২০২০-২১ মরশুমেই) এই ফর্মেটে টুর্ণামেন্ট আয়োজন করা শুরু করে দিয়েছে। বর্তমান ২০২৫-২৬ মরশুমে যা ৬ষ্ঠ বর্ষে পা দিতে চলেছে। পাশাপাশি এটাও বলার যে এই টুর্নামেন্টের নাম প্রথম থেকে ই ৺ভূপেন্দ্র কুমার দে মেমোরিয়াল জুনিয়ার ওয়ান -ডে টু-ইনিংস টুর্নামেন্ট" হিসেবে পরিচিত।
এছাড়াও ক্রিকেট দর্পণ আয়োজিত মহিলাসাব-জুনিয়ার টি টুয়েন্টি টুর্নামেন্টটি ৺জগমোহন ডালমিয়া-র সহধর্মিনী তথা স্বর্গীয়া চন্দ্রলেখা ডালমিয়া-র নামাঙ্কিত টুর্ণামেন্ট রূপে ২০১৯-২০ মরশুম থেকে শুরু হয় (২রা মে,২০১৯)। আর এই টুর্নামেন্টের নাম- "চন্দ্রলেখা ডালমিয়া মেমোরিয়াল সাব-জুনিয়ার উইমেন্স টি টুয়েন্টি টুর্নামেন্ট "
ক্রিকেট দর্পণ আয়োজিত টুর্নামেন্ট শুরু করার দ্বিতীয় বছর থেকেই (২০১২-১৩) ক্রিকেট দর্পণ টুডেজ টুর্নামেন্ট শুরু করে। প্রথম দিকে যা ৮৫ ওভারের দুই দিনের ছিলো। পরবর্তীতে টু'ডেজ টু ইনিংস টুর্নামেন্ট হিসাবে করা হয়। আর এই টুর্নামেন্টটি ২০২১-২২ মরশুম থেকে টু-ডেজ লীগ টুর্ণামেন্ট যা "স্বর্গীয় সন্তোষ রঞ্জন গাঙ্গুলী এবং স্বর্গীয়া লক্ষ্মী গাঙ্গুলী মেমোরিয়াল ট্রফি" নামাঙ্কিত টুর্নামেন্ট হিসেবেই পরিচিতি লাভ করে।
ঠিক এই পরিসরেই অর্থাৎ ক্রিকেট দর্পণ আয়োজিত টুর্নামেন্ট প্রসঙ্গে কথা উঠলে যে কথাটি না বললেই নয়, তাহ'লো- ২০১০ এর জন্মলগ্ন থেকে যেমন ক্রিকেট দর্পণ তাদের নিজস্বতা ও স্বকীয়তা বজায় রেখেই ক্রিকেটকে বিষয় করে এই বাংলার ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের নিয়ে কাজ করে চলেছে, তেমনি আগামী দিনেও তারা তাদের সেই ভাবনাকে বজায় রেখেই কাজ করে যেতে চায়। এর পাশাপাশি তারা বাংলার ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রে সার্বিক মানোন্নয়ন এর স্বার্থে কারো সঙ্গে মিলিত ভাবে কাজ করতেও রাজি। এক্ষেত্রে যে কোনো উদার ও ক্রীড়া মনষ্ক ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে মিলিত হ'য়ে, একসাথে কাজ করতে ক্রিকেট দর্পণ এর কখনো কোনো আপত্তি ছিলনা আর থাকবেওনা, এমন ভাবনাতেও তারা আছে।
আর ঠিক সেই জায়গা থেকেই ২০২২-২৩ থেকে বাংলার ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের স্বার্থে এবং সামগ্ৰিক ভাবে এই রাজ্যের ক্রিকেটের মানোন্নয়নের প্রেক্ষিতে ক্রিকেট দর্পণ আরো বড় পরিসরে কাজ করার অভিপ্রায়ে বা তাদের কাজের ব্যপ্তি ঘটানোর ভাবনাতেই ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম এক ঐতিহ্যবাহী ও স্বীকৃত ক্রিকেট প্রতিষ্ঠান তথা বিসিসিআই এর অন্যতম এক প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ন্যাশানাল ক্রিকেট ক্লাব এর সঙ্গে একসঙ্গে কাজ শুরু করেছে। তার-ই প্রাথমিক ধাপ হিসেবেই সেই বছরেই (২০২২-২৩ ক্রিকেট মরশুম) ক্রিকেট দর্পণ এর নিজস্ব টুর্ণামেন্ট অনূর্ধ্ব-১৯ এর টু-ডেজ টুর্ণামেন্টটিকে ন্যাশানাল ক্রিকেট ক্লাব এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে করা হয়। আর এক্ষেত্রে টুর্ণামেন্টের নামের পরিবর্তন হ'য়ে বর্তমানে এটি "এন.সি.সি জুনিয়ার (অনূর্ধ্ব উনিশ) ওয়ানডে চ্যাম্পিয়নস লীগ টুর্নামেন্ট"-এ পরিচিত। যা ২০২৩-২৪ এবং ২০২৪-২৫ মরশুম পার করে এবার ২০২৫-২৬ এ এসে ৪র্থ মরশুমে পড়লো। এই টুর্নামেন্টটির পরিচালনার ক্ষেত্রে ক্রিকেট দর্পণ সহযোগিতা করলেও মনে রাখতে হবে টুর্নামেন্টেটি ন্যাশনাল ক্রিকেট ক্লাব এর এবং যা "এন.সি.সি জুনিয়ার আন্ডার নাইন্টিন টুর্নামেন্ট" হিসেবে স্বীকৃত। অর্থাৎ আগামী দিনেও এন.সি.সি-র জন্য এই টুর্নামেন্টটি ধার্য করা হ'লো।
পাশাপাশি আরো কিছু টুর্ণামেন্ট এবং কিছু ক্রিকেটীয় বিষয়ও যা ক্রিকেট দর্পণ এর নিজস্ব বলে পরিচিত- ছিল, আছে, সেখান থেকেও পারস্পরিক আলোচনা প্রেক্ষিতে এন.সি.সি-কে দেওয়া হয়েছে ও আগামী দিনেও দেওয়া হতে পারে (ক্রিকেট দর্পণ এর পক্ষ থেকে সেই মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে)। মনে রাখতে হবে সামগ্ৰিক ক্রিকেটের ও ক্রিকেটারদের ভালোর স্বার্থে ক্রিকেট দর্পণ কাজ করতেই তাদের সৃষ্টি । সুতরাং কোন কাজটি কে বা কারা করলো, কারা সেখানে প্রাধান্য বেশি পেলো সেটা বিচার্য নয়, সেই ভালো কাজে শুধু ক্রিকেট দর্পণ এর সামান্য উপস্থিতিটাই আমাদের ধন্য করবে। নাম কেনার জন্য ক্রিকেট দর্পণ নয়, অন্যকে নামী করাতেই ক্রিকেট দর্পণ এর সৃষ্টি। আমরা সেই কাজটা করে যেতে পারলেই ধন্য ও গর্বিত হবো।
প্রসঙ্গত আরো জানানো যায় যে, ক্রিকেট দর্পণ এর পক্ষ থেকে এক বা একাধিক যে যে টুর্ণামেন্টকেই এন.সি.সি-র নামাঙ্কিত টুর্নামেন্ট হিসেবে আয়োজন করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হোকনা কেনো সেই সকল টুর্ণামেন্টের সহযোগী আয়োজক হিসেবে ন্যাশানাল ক্রিকেট ক্লাব এর পাশাপাশি ক্রিকেট দর্পণ পূর্বের মতোই থাকছে ও কাজ করে যাবে (পারস্পরিক মতামতের ভিত্তিতে)।
এর পাশাপাশি এও জানানো যায় যে ক্রিকেট দর্পণ এর দীর্ঘদিন এর আরো একটি ভাবনা বা পরিকল্পনা ছিলোই, সেটা হ'ল- যেসকল জেলা বাস্তবিকই নিজস্বতা নিয়ে বাংলার ক্রিকেটের মূল স্রোতে নিজেদের সেভাবে মেলে ধরতে পারছেনা, যেসব জেলার সিএবি অ্যাফিলিয়েশন না থাকার কারণে তাদের জেলার ক্রিকেটাররা বাংলার বেশির ভাগ জেলার ক্রিকেটারদের মতো ইন্টার ডিস্ট্রিক্ট টুর্ণামেন্টে অংশগ্রহণ করতে পারছেনা, আর এর ফলে যেসব জেলার ক্রিকেট পিছিয়ে পড়ছে- ক্রিকেটাররা আশাহত হচ্ছে, সেই তাদের জন্য কিছু করার। কিন্তু বিগত ১৩ বছর ধরে সেই ভাবনা মনে থাকলেও তাকে বাস্তবায়ন করতে না পারার মূল কারণ অবশ্যই অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা।
আর আমাদের সেই পরিকল্পনা নিয়ে বাংলার ক্রিকেটের অন্যতম ক্রিকেট প্রশাসক তথা প্রাক্তণ সিএবি সভাপতি অভিষেক ডালমিয়া-র সঙ্গে আলোচনা হওয়ার পর তিনিও তখন সেই বিষয় নিয়ে নিজস্ব ভাবনা ও ইচ্ছের কথা প্রকাশ করেন। আর সেই পারস্পরিক মতামতের প্রেক্ষিতে নেওয়া সিদ্ধান্তে ঠিক হয় যে, ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের ব্যপ্তির স্বার্থে এন.সি.সি-র সঙ্গে সহযোগীতা করে ক্রিকেট দর্পণ কাজ করবে। আর সেই ভাবনাতেই ২০২২-২৩ এর মরশুম থেকে একটি আমন্ত্রণ মূলক সিনিয়ারদের ইন্টার ডিস্ট্রিক্ট টি-টুয়েন্টি টুর্নামেন্ট করা শুরু হয়। যা "এন.সি.সি ইন্টার ডিস্ট্রিক্ট সিনিয়ার টি-২০ ইনভিটিশনাল টুর্ণামেন্ট" নামেই আয়োজিত হয়।
মূলত পাঁচটি জেলা নিয়ে আয়োজিত টুর্নামেন্টের সূচণা ৮ই এপ্রিল ২০২৩ এ আলিপুরদুয়ার হয়েছিল। প্রথম বছর এন.সি.সি-র সঙ্গে ক্রিকেট দর্পণ মিলিতভাবে সেবার ইন্টার ডিস্ট্রিক্ট (সিনিয়ার) যে টুর্নামেন্টটি আয়োজন করছে তাতে যে জেলাগুলি অংশগ্রহণ করছে তারা হ'লো- উত্তর বঙ্গের ৩ জেলা, যথাক্রমে কালিম্পং, দার্জিলিং ও আলিপুরদূয়ার। এছাড়াও ঝাড়গ্ৰাম ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলাও খেলছে। পাশাপাশি এই পাঁচ জেলার থেকেই বাছাই করে পাঠানো ক্রিকেটার নিয়ে "কম্বাইন্ড ইলেভেন" নামে আরেকটি দল গড়ে মোট ছয় দলীয় টুর্ণামেন্টের আয়োজন করা হয়। সেবার টুর্ণামেন্টের লীগ পর্বের খেলা (পরস্পরের বিরুদ্ধে দুই বার কর খেলানো হয়) দুই ভেন্যুতে যথা আলিপুরদূয়ার এবং পূর্ব মেদিনীপুর এর হলদিয়ায় হয়। পরবর্তী দুই বছরে ২০২৩-২৪ এবং ২০২৪-২৫ এও আরো ব্যপক আকারে বীরভূমের এম.জি.আর স্টেডিয়ামে ন্যাশনাল ক্রিকেট ক্লাব এই টুর্নামেন্টের আয়োজন করে, যেখানেও ক্রিকেট দর্পণ এর ভূমিকা চূড়ান্ত ভাবেই থেকে গেছে। আগামী দিনেও ন্যাশনাল ক্রিকেট ক্লাব এর প্রয়োজন প্রেক্ষিতে ক্রিকেট দর্পণ এক-ই ভাবে এই টুর্নামেন্টের পাশাপাশি ক্রিকেট বিষয়ক কাজে ক্রিকেট দর্পণ সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তুত।
পরিশেষে জানানো যাচ্ছে যে, সীমাহীন সীমাবদ্ধতা নিয়ে যে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানটির সূচনা এবং সূচনালগ্ন থেকে পরবর্তী সময়ের প্রতিনিয়ত একাধিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এযাবৎকালে যে ক্রিকেট দর্পণ বাংলার ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের স্বার্থকেই শুধু মাত্র প্রাধান্য দিয়ে নানা কাজ করে আসছে, আজ তাদের সেই কাজকে মান্যতা ও সম্মাণ দিয়ে যদি কেউ ব্যক্তিগত বা প্রতিষ্ঠানগত ভাবে ক্রিকেট দর্পণকে কাছে ডেকে নেয়, একইভাবে বাংলার ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের সামগ্ৰিক স্বার্থ ও মানোন্নয়ন নিয়ে ভেবে ক্রিকেট দর্পণ এর সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করতে চায়, তবে সেটাই হবে ক্রিকেট দর্পণ তথা সেই পারিবারিক প্রতিষ্ঠানের কাছে এযাৎকালের কাজের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি। পাশাপাশি এজন্য তারা ধন্য ও গর্বিতও।
তাই আজ বাংলা তথা দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী এক ক্রিকেট প্রতিষ্ঠান তথা বিসিসিআই এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রূপে স্বীকৃত ন্যাশানাল ক্রিকেট ক্লাব এর সঙ্গে ক্রিকেট দর্পণ একত্রিত হয়ে যখন যৌথ ভাবে ক্রিকেট বিষয়ে অন্তত কিছু কাজ করার সুযোগ পেয়েছে (কোনো রূপ লিখিত পরিভাষায় নয়, সম্পূর্ণ মৌখিক ও পারস্পরিক বিশ্বাস আর মর্যাদা দেওয়ার প্রেক্ষিতে) তখন তাকে অবশ্যই মান্যতা দেবে। আর এই পারস্পরিক সহযোগিতার মধ্যে দিয়েই যে আগামীদিনে সামগ্ৰিক ভাবে বাংলার ক্রিকেটের পাশাপাশি ক্রিকেটারদের স্বার্থও যে আরো সুরক্ষিত হবেনা, সেটা কে ব'লতে পারে! বরং সেই আশা রাখা যেতেই পারে। আমরা তো রাখছি। আশা রাখুন আপনারাও, আর বাংলার আপামর ক্রিকেট এবং প্রকৃত ক্রীড়ানুরাগীরাও ...
এই অবসরে আমরা না হয়, আরো একটু এগিয়ে চলি.... আর আমাদের মন্ত্র হোক একটাই -
"চরৈ বেতি, চরৈ বেতি"...
আমাদের কথা ...
বিগত পনেরো বছরে আমাদের চলার পথে মন্ত্র একটাই "চরৈ বেতি চরৈ বেতি"....
-জয়দেব ভট্টাচার্য্য